Google Pay বাংলাদেশে: সুবিধা, অসুবিধা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমানে বাংলাদেশে Google Pay চালুর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অনেকেই জানতে চান, এই পেমেন্ট সার্ভিসটি আসলে কী, এর সুবিধা-অসুবিধা কী কী, এবং এর সঙ্গে যুক্ত চার্জ বা খরচ কেমন হবে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা Google Pay সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
Google Pay আসলে কী?
Google Pay হলো Google-এর একটি পেমেন্ট সার্ভিস, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই চালু আছে। বাংলাদেশে এটি নতুন হলেও, শুরুতেই সবাই এর সুবিধা নিতে পারবেন না। প্রাথমিকভাবে, আপনার যদি সিটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকে এবং সেই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ভিসা অথবা মাস্টার কার্ড যুক্ত থাকে, তবেই আপনি Google Pay ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ, সিটি ব্যাংকের গ্রাহক এবং ভিসা/মাস্টার কার্ডধারী ব্যক্তিরাই শুরুতে Google Pay অ্যাপে তাদের কার্ড যুক্ত করে NFC (Near Field Communication)-এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। তবে, দোকানে যদি Google Pay পেমেন্টের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে আপনার কাছে এই সুবিধা থাকলেও তা কাজে আসবে না।
বর্তমানে শোনা যাচ্ছে যে, যেসব মোবাইলে NFC সাপোর্ট করে না, সেগুলোতে Google Pay ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশের ২০-২৫ হাজার টাকা মূল্যের অধিকাংশ ফোনেই NFC নেই, তাই এই বিষয়টি Google Pay চালু হওয়ার পর আরও স্পষ্ট হবে।
Google Pay এর মূল সুবিধা কী?
অনেকেই ভাবতে পারেন, যদি সিটি ব্যাংকের অ্যাপ দিয়েই পেমেন্ট করা যায়, তাহলে Google Pay-এর বাড়তি সুবিধা কী? Google Pay-এর আসল সুবিধা তখন পাওয়া যাবে, যখন বাংলাদেশের সকল ব্যাংক এর আওতায় আসবে। তখন আপনি চাইলে, Google Pay-এর মাধ্যমে যেকোনো ব্যাংক থেকে অন্য যেকোনো ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবেন – যেমন ইসলামী ব্যাংক থেকে ব্র্যাক ব্যাংকে, অথবা সোনালী ব্যাংক থেকে রূপালী ব্যাংকে।
ববর্তমানে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠাতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রিত NPSB বা BEFTN সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি নির্ভর করে বিভিন্ন ব্যাংক ও মধ্যবর্তী নেটওয়ার্কের উপর, যার কারণে মাঝে মাঝে লেনদেন বিলম্বিত হতে পারে। একটি সার্ভারে সমস্যা হলে পেমেন্ট আটকে যেতে পারে এবং ঠিক হতে ৭-১৪ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। Google Pay চালু হলে এই জটিলতা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
এছাড়াও, Google Pay ব্যবহার করে আপনি প্লে স্টোর থেকে যেকোনো পেইড অ্যাপ কিনতে পারবেন বা সাবস্ক্রিপশন নিতে পারবেন। বর্তমানে এর জন্য ডলারের প্রয়োজন হয়, কিন্তু Google Pay চালু হলে আপনি সরাসরি টাকা দিয়েই এই সুবিধাগুলো নিতে পারবেন।
Google Pay-এর অসুবিধা
Google Pay-এর সবচেয়ে বড় অসুবিধার মধ্যে একটি হলো, iPhone-এ Google Pay অ্যাপ ব্যবহার করা গেলেও NFC ভিত্তিক পেমেন্ট সাপোর্ট করে না। প্রাথমিকভাবে, শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরাই এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন, বিশেষ করে NFC পেমেন্টের ক্ষেত্রে।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি সুবিধা হিসেবে শোনা যাচ্ছে যে, ভিসা এবং মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে এবং বিদেশ থেকে দেশে ডলার পাঠানো সহজ হবে। যদিও এর সত্যতা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে এটি বাস্তবে হলে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি বড় স্বস্তি হবে।
Google Pay-এর চার্জ বা খরচ কেমন হবে?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, Google Pay ব্যবহার করলে কি কোনো চার্জ বা খরচ কাটবে? আপনি যখন কোনো দোকান থেকে কেনাকাটা করে Google Pay-এর মাধ্যমে পেমেন্ট করবেন, তখন Google Pay সরাসরি কোনো চার্জ কাটবে না। তবে, ব্যাংক চার্জ কাটতে পারে। যেমন, বিকাশে ক্যাশআউট করতে হাজারে প্রায় ১৮ টাকা চার্জ কাটে। Google Pay-এর ক্ষেত্রে কত টাকা বা কত শতাংশ চার্জ কাটা হবে, তা সেবাটি চালু না হলে সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যাংকের উপর নির্ভর করবে।
ভারতে প্রতি লেনদেনে হাজারে ৫ টাকা করে চার্জ কাটা হয়। আশা করা যায়, বাংলাদেশে বিকাশ, রকেট, নগদ-এর তুলনায় Google Pay-এর চার্জ অনেক কম হবে। আরেকটি সম্ভাব্য সুবিধা হলো, Google Pay ব্যবহার করে ATM বুথ থেকে টাকা ক্যাশ আউট করা যেতে পারে, যদিও এটি বাংলাদেশে চালু হবে কিনা, তা এখনও জানা যায়নি (ভারতে এই সিস্টেম চালু আছে)।